Header Ads

মারাত্মক বিষাক্ত যত ফুলের গল্প


ফুল বিধাতার এমনই এক সৃষ্টি, যা দেখলে যে কারো মনই ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। আপনার মন খারাপ? কিছুক্ষণ ফুলের রাজ্য থেকে ঘুরে আসুন। দেখবেন আপনাআপনিই মন ভালো হয়ে গেছে। 

কাছের কারো মন খারাপ? তাকে এক তোড়া তারই পছন্দের ফুল কিংবা ফুলের মালা উপহার দিন। দেখবেন, তার মনের আকাশ থেকেও মেঘ সরে গিরে সূর্যের আলো উঁকি দিতে শুরু করেছে। ফুলের বৈচিত্রময় রঙ, হরেক রকম গন্ধ, ফুলের ওপর প্রজাপতির উড়ে বেড়ানোর মতো দৃশ্যগুলো কীভাবে যেন আমাদের বিষণ্ন মনের জন্য প্রতিষেধক রুপে কাজ করে।
ফুল নিয়ে তো এতক্ষণ কেবল প্রশংসাই করে গেলাম। কিন্তু এই ফুলও আবার বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ধুতুরা ফুলের কথাই ধরুন না। যাদের বাসার আশেপাশে এই ফুলগাছ থাকে, তাদের অনেকেই গাছগুলো কেটে ফেলেন। যারা কাটেন না, তারাও তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খুব করে সতর্ক করে দেন, যেন তারা খেলার ছলে হলেও কোনোভাবেই এই ফুল মুখে না দেয়। কেন? কারণ এটি বিষাক্ত। ফুল বিধাতার এমনই এক সৃষ্টি, যা দেখলে যে কারো মনই ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। আপনার মন খারাপ? কিছুক্ষণ ফুলের রাজ্য থেকে ঘুরে আসুন। দেখবেন আপনাআপনিই মন ভালো হয়ে গেছে। কাছের কারো মন খারাপ? তাকে এক তোড়া তারই পছন্দের ফুল কিংবা ফুলের মালা উপহার দিন। দেখবেন, তার মনের আকাশ থেকেও মেঘ সরে গিরে সূর্যের আলো উঁকি দিতে শুরু করেছে। ফুলের বৈচিত্রময় রঙ, হরেক রকম গন্ধ, ফুলের ওপর প্রজাপতির উড়ে বেড়ানোর মতো দৃশ্যগুলো কীভাবে যেন আমাদের বিষণ্ন মনের জন্য প্রতিষেধক রুপে কাজ করে।
ফুল নিয়ে তো এতক্ষণ কেবল প্রশংসাই করে গেলাম। কিন্তু এই ফুলও আবার বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ধুতুরা ফুলের কথাই ধরুন না। যাদের বাসার আশেপাশে এই ফুলগাছ থাকে, তাদের অনেকেই গাছগুলো কেটে ফেলেন। যারা কাটেন না, তারাও তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খুব করে সতর্ক করে দেন, যেন তারা খেলার ছলে হলেও কোনোভাবেই এই ফুল মুখে না দেয়। কেন? কারণ এটি বিষাক্ত। আজকে আমরা পৃথিবীর এমনই কিছু বিষাক্ত ফুল সম্পর্কে পরিচিত হবো, যেগুলোর বাহ্যিক রুপ আপনাকে মুগ্ধ করবে ঠিকই, কিন্তু ভেতরের রুপ বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে আপনার!
১) মিস্‌লটো
সুপরিচিত এই গাছটির জনপ্রিয়তার কারণটি বেশ চমৎকার। একে ভালোবাসার প্রতীক রুপে গণ্য করা হয়ে থাকে। সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষকে প্রথমবার চুম্বনের সময় পাশ্চাত্য দেশগুলোতে এই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কাজটি করার একটি প্রবণতা দেখা যায়। মাঝে মাঝে এমনও ব্যবস্থা থাকে, যেখানে আলাদা করে ঝোলানো মিস্‌লটো শাখার নিচে দাঁড়িয়েই কপোত-কপোতী কাজটি সেরে নেয়।
সে যা-ই হোক, ভালোবাসার প্রতীক মিস্‌লটোর ফুল কিন্তু আবার পুরোপুরিই আলাদা। এটা আপনার মৃত্যুর কারণ হবে না ঠিকই, কিন্তু ভুলবশত ফুলটির কোনো অংশ পেটে চলে গেলে সাথে সাথেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। বমি বমি ভাব, ঝাপসা দৃষ্টি এবং ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে এর ফলে।
প্রাচীনকালে গ্রিকরা বিশ্বাস করতো, মিস্‌লটো হলো উর্বরতা প্রতীক এবং এটি নবজীবন দানে সক্ষম। তবে বাস্তবতা হলো, অধিক পরিমাণে ফুলের অংশ পেটে গেলে সে আপনার জীবনটা নিয়েই টান দেবে! স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা একে শান্তির বৃক্ষ হিসেবে মনে করতো এবং এর নিচেই বিভিন্ন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করতো।
২) ওলিয়েন্ডার (করবী)
করবীর বিষয়টি বেশ অদ্ভুত। সে যে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, ঠিক একই সমস্যার সমাধানেও ঠিক তাকেই কাজে লাগানো সম্ভব। কীভাবে? করবী ফুল গিলে ফেললে এর প্রভাবে আপনারহৃদস্পন্দন ধীর হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, একই ফুলের নির্যাস আবার হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিরোধেও কাজে লাগানো হয়। পাশাপাশি মৃগী রোগ, অ্যাজমা, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধকল্পেও এই ফুলের নির্যাস ব্যবহার করা হয়।
আবার চিকিৎসা ব্যতীত কেবলমাত্র শখের বশে সরাসরি ফুলটি গলাধঃকরণ করলে এর ফলে পাকস্থলীতে প্রদাহ, চামড়ায় ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি ওঠা, ভারসাম্যহীন অনুভব করা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অনিয়মিত হৃদস্পন্দনসহ আরো বহুবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে থাকা বিষাক্ত উপাদানগুলোর মাঝে রয়েছে ডিজিটক্সিজেনিন, নেরীন, ওলিয়েন্ড্রিন ও এলিওন্ড্রোসাইড।
৩) উইস্টেরিয়া
গোলাপী, রক্তবর্ণ, সাদা কিংবা নীল রঙের হয়ে থাকে এই ফুলগুলো। এদের উৎপত্তি চীন, কোরিয়া ও জাপানে হলেও কালক্রমে এরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে নিজেদের জায়গা করে নেয়। থোকায় থোকায় সজ্জিত এ ফুলগুলো দেখতে যে অসাধারণ, সেটা তো ছবিই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
তবে, ভুলেও যদি একবার পেটে যায়, তাহলেই বমি, ডায়রিয়া, তলপেটে ব্যথাসহ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এই ফুলগাছটির প্রায় প্রতিটি অংশই কম-বেশি বিষাক্ত, তবে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত হলো এর বীজগুলো। মানুষের পাশাপাশি কুকুর-বিড়ালের জন্যও এগুলো সমপরিমাণে ক্ষতিকর। তাই দৃষ্টিনন্দন এ গাছগুলো বাড়িতে লাগানোর পূর্বে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৪) অ্যাঞ্জেলস ট্রাম্পেট
Brugmansia গণের পেন্ডুলামের ন্যায় ঝুলে থাকা এই ফুলগুলোকে দেখলে নম্র-ভদ্র-শান্তশিষ্ট কারো প্রতিকৃতিই আপনার মনে ভেসে উঠতে পারে। কিন্তু, পেটে গেলেই চিত্তবিভ্রম, হ্যালুসিনেশন, ডায়রিয়া, বমি, চোখের মণিতে সমস্যা, প্যারালাইসিস, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
মূলত দক্ষিণ আমেরিকাতেই দেখা মেলে এই ফুলের। বনাঞ্চল থেকে এর বিলুপ্তি ঘটে গেছে আগেই। এখন কেবলমাত্র চাষের মাধ্যমেই এর কিছু হাইব্রিড টিকে আছে।
৫) ফক্সগ্লোভস
Digitalis গণের এই ফুলের উৎপত্তি ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশে। এই গাছে রয়েছে গ্লাইকোসাইড, ডিজিটক্সিন ও ডেস্লানোসাইড, যার প্রতিটিই হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য এই ফুলের ২০ প্রজাতির প্রতিটি সম্পর্কেই সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়। এমনি এমনিই তো আর ‘মৃত মানুষের ঘণ্টাধ্বনি’ নামটি নিজের করেনি ফুলটি!
গাছের প্রতিটি অংশই বিষাক্ত, তবে সবচেয়ে বিষাক্ত হলো কাণ্ডের একেবারে উপরের দিককার পাতাগুলো, যা আপনাকে দ্রুততর সময়ে পরপারে পৌঁছে দেবে। চিত্তবিভ্রম, হ্যালুসিনেশন, বমি, কনভালশন, কাঁপুনিসহ নানাবিধ প্রতিক্রিয়াই দেখা যাবে কেবলমাত্র এই গাছের পাতায় একটিবার কামড় দিলেই!
৬) আজালিয়া
এই ফুলগুলো Rhododendron গণের সদস্য। তবে এরা কেবল মানুষের জন্যই নয়, এর পাশাপাশি কুকুর, বিড়াল এবং ঘোড়ার জন্যও মারাত্মক রকমের বিষাক্ত। আজালিয়ায় থাকা বিষাক্ত গ্রায়ানোটক্সিন আপনার কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে কোমায় পাঠিয়ে দিতে পারে আপনাকে। আর বেশি গ্রহণ করলে তো সরাসরি পরপারেই পাঠিয়ে দেবে!
এশিয়ায় এই ফুলগুলো প্রচুর পরিমাণে জন্মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোতেও এদের প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। আবার এর ২৬টি প্রজাতির জন্ম উত্তর আমেরিকাতেই।
যত বিষাক্তই হোক না কেন, ফুলগুলো দেখতে সত্যিই বেশ সুন্দর। তাই একে নেপালের জাতীয় ফুলের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রাচীন চীনা নথিগুলোতে সৌন্দর্যের জন্য এর প্রশংসাও করা হয়েছে।
৭) বেলাডোনা
ডেডলি নাইটশেড, ডেভিলস চেরিস, বেলাডোনা ইত্যাদি নানাবিধ নামে পরিচিত এই ফুলটির বৈজ্ঞানিক নাম Atropa belladonna। ইউরোপ, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকাতেই মূলত ফুলটি জন্মে থাকে।
গাছটির আগাগোড়াই বিষাক্ত। যদি ভুলেও এর বিচি আপনার পেটে চলে যায়, তবে তীব্র পানি পিপাসা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, চোখের মণির প্রসারণ, চামড়ায় লালচে ফুসকুড়ি ওঠাসহ সংজ্ঞাহীন অবস্থা দেখা দিতে পারে। আবার অনৈচ্ছিক পেশীসমূহের সাথে যুক্ত স্নায়ুপ্রান্তকেও এটা অবশ করে দিতে পারে।
যে ফুল থেকে প্রাপ্ত বিচি এত ভয়ানক, সেই বেলাডোনার অর্থ কিন্তু বেশ অদ্ভুত। ইতালীয় ভাষায় ‘বেলাডোনা’ বলতে ‘সুন্দরী নারী’দের বোঝানো হয়ে থাকে। কেননা, এককালে ইতালীয় নারীরা তাদের চোখের মণি সম্প্রসারণের জন্য বেলাডোনার নির্যাস চোখে লাগাতেন। তারা মনে করতেন, এটা তাদেরকে আরও রুপবতী করে তোলে!
৮) পয়জন ও ওয়াটার হেমলক
এই ফুলের উৎপত্তি মূলত ইউরোপ ও আফ্রিকায়। অবশ্য পরবর্তীকালে উত্তর আমেরিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতেও ঘটেছে এর আগমন। এটি এতটাই ভয়ানক যে, শখের বশে কেবলমাত্র গন্ধ শোঁকাও আপনার মৃত্যুর কারণ হতে পারে! পয়জন হেমলক শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ করে একজন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটাতে পারে। বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে পয়জন হেমলকই ব্যবহার করা হয়েছিল।
ওয়াটার হেমলক তো পয়জন হেমলকের চাইতেও বেশি বিষাক্ত। একে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বিষাক্ত গাছও বলা হয়ে থাকে।

No comments

Thanks

Powered by Blogger.